৬০ বছরে প্রথম বিকল্প শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে চট্টগ্রামবাসী

৬০ বছরে প্রথম বিকল্প শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে চট্টগ্রামবাস

শুদ্ধতার প্রতীক সাদা রঙের ছোঁয়ায় চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে আছে নবনির্মিত বিকল্প শহীদ মিনার। স্নেহময়ী আনত মস্তক মাতার প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ দুই স্তম্ভের কাঠামো এবং ওপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো।
পেছনে উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত, এবং দুই পাশে সন্তানের প্রতীক স্বরূপ হ্রস্বতর দুটি করে কাঠামো। সামনে সিঁড়ি বাঁধানো চত্বর। দীর্ঘ ৬০ বছর পর প্রথমবারের মতন চট্টগ্রামবাসী একুশের প্রভাত ফেরিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন বিকল্প শহীদ মিনারে।
কারণ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পুরোটাই ভেঙে ফেলায়, নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এবছরের একুশের প্রভাত ফেরি হবে অন্যরকম। তার আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী অস্থায়ী এ শহীদ মিনার উদ্বোধন করেছেন।
১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে নগরের কেসি দে রোডের পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি আরও আধুনিকায়ন করা হয়। বন্দরনগরে কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারটি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় এত বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবসগুলোতে এই শহীদ মিনারেই সকল ধরনের কর্মসূচি পালন করে এসেছে চট্টগ্রামবাসী।

এদিকে, অন্যান্য বারের মতো এবারও রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম দফা শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি রাখা হয়েছে শহীদ মিনারে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে প্রভাতফেরি। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে প্রতিটি সংগঠন থেকে পাঁচজন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ দু’জন শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়াও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
অন্যদিকে, গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা থেকে নগরের তিনপোল থেকে আমতল হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। একইভাবে সিনেমা প্যালেস থেকে রাইফেল ক্লাব পর্যন্ত সড়কেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে তিনপোলের মাথা থেকে শিক্ষা অফিসের সামনে দিয়ে আমতল পর্যন্ত একমুখী সড়ক চালু থাকবে। সেইসঙ্গে নিউমার্কেট, আমতল, তিনপুল ও সিনেমা প্যালেস মোড়ে প্রতিবন্ধক বসানো হবে এবং যানবাহন নির্দিষ্ট সড়ক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। রাত ১২টায় এবং সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তারা নগরীর ওয়াসা-কাজির দেউরি- নেভাল ক্রসিং- লাভ লেইন- বৌদ্ধ মন্দির- বোস ব্রাদার্স- রাইফেল ক্লাব হয়ে আমতল মোড় পৌঁছবেন। তাদের গাড়ি থাকবে রাইফেল ক্লাবের মাঠে। সুবিধা অনুযায়ী তিন পোলের মাথা এবং নিউমার্কেট মোড়েও গাড়ি রাখা যাবে। সবাইকে আমতল থেকে পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তারা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুনরায় আমতল দিয়ে চলে যেতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আট তলা অডিটরিয়াম ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এ কারণেই পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও একই নকশায় একই স্থানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটিকে নতুনভাবে নির্মাণের জন্য ভাঙা হয়েছিল। তবে নির্মাণ কাজ আগামী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।